এখন হালখাতা আর বিয়ের আমন্ত্রনের চিঠি ছাড়া চিঠির চল নেই বললেই চলে। যদি চিঠি লেখা হয় তা হয়তো পরীক্ষার খাতায় কিংবা চিঠির আধুনিক রূপ ইমেইল।
ইতিহাসে চিঠির অর্থবহ গুরুত্ব রয়েছে, প্রাচীন মিসরে মিলেছে ইতিহাসের প্রথম দিকের চিঠি। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালে যেখানে প্যাপিরাসের বার্তা লিখতে ব্যবহার করা হতো। মেসোপোটেমিয়া সভ্যতায় রাজা – ব্যাসায়ীরা মাটিতে খোদাই করে বার্তা পাঠাতেন। ভারতের সম্রাট অশোক খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে শিলালিপি আর দূতের মাধ্যমে পত্র পাঠাতেন। চীনে তাং রাজবংশ ৭ম শতকে” পোস্টাল সিস্টেম ” তৈরি করে যেখানে অশ্বারোহী বার্তা বহন করত।
একটি চিঠি মধ্যযুগে পুরো বিশ্বের মোড় ঘুরিয়ে ফেলে তা হলো হযরত মোহাম্মদ (স:) এর প্রেরিত তৎকালীন রাজা- বাদশাদের কাছে পাঠানো চিঠি। ইউরোপে ১৫শ শতকের পর ব্যক্তিগত চিঠির প্রচলন শুরু হয়। ১৮৪০ সালে বিশ্বের প্রথম স্ট্যাম্প (penny black) চালু হয়। উপমহাদেশে দূত ও ঘোড়ার ডাক ব্যবস্থা চালু করেন শাসক শের শাহ্। তিনি দিল্লি থেকে বাংলা পর্যন্ত গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড তৈরি করেন এবং এই সড়কের প্রতি ২ কস ( প্রায় ২ মাইল)পর ডাকবাংলা নির্মাণন করেন যেখানে দূত চিঠি বহনের জন্য থাকতেন।
একটি চিঠি ইতিহাস বদলাতে পারে, প্রথম ও ২য় মহাযুদ্ধের সময়ও চিঠির মাধ্যমে খবরাখবর বহন করা হয়। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি চিঠি তার পরিবারকে তার বেচে থাকা নিশ্চিত করত।
আজ ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস। আমি আমার বন্ধু, ভাইবোনকে চিঠি দিয়েছি সাথে বড়দের। বড়দের চিঠির আবেগ আর আমাদের চিঠি এক নয় তা বোঝা যায় কারণ আমরা এ যুগে মুঠোফোন আর নানা ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করি, ভাবতেই কেমন লাগে একটি চিঠির জন্য কতটা অপেক্ষা। নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে রানার নামে একটি কবিতা আছে, চিঠি বহনকারী দূতের অসামান্য অবদানকে ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না। যদিও এখন লাল ডাকবাক্স নাই, হলদে কাপড় পরা চিঠি -পিয়ন নাই তবুও চিঠি পেয়ে আমরা ভালোবাসা ভাগ করে নিচ্ছি, দুখের খবর এখানে আসে না তেমন, আগেকার দিনে পরিবারের কেও বিদেশ থাকলে তার বাবা মারা গেলে খবর পেতেন দু-তিনমাস পর এটা ভাবতেই কান্না পায়। একটি চিঠি বেচে থাকুক হাজর বছর।