বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় খুব কাছ থেকে গুলি করে রাজু আহমেদ নামে এক যুবককে খুনের ঘটনায় সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ ২০২৫) ভোরে কক্সবাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় তিনি আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকায় রাজু আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার ভিডিও দেখে ওমর ফারুককে শনাক্ত করা হয়। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুব কাছ থেকে রাজুকে গুলি করে হত্যা করেন।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুকছবি: পুলিশের সৌজন্যে
সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি একটি বাড়ির গেটের কাছে অবস্থান করছেন। গেটের কাছের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুজনকে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাকে এবং অন্যজন ছিলেন আনসারের পোশাকে। আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তি হঠাৎ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ওই গেটে অবস্থান করা ব্যক্তিদের কাছাকাছি ছুটে আসেন। এ সময় সেখানে থাকা মানুষজন ভয়ে গুটিসুটি মেরে দেয়ালের সঙ্গে লেগে যান। আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তিটি দেয়ালের কাছে থাকা এক ব্যক্তির একবারে কাছে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে একের পর এক গুলি করতে থাকেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সড়কে থাকা পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এসে গুলি শুরু করেন।
পুলিশ বলছে, আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তিটি হলেন ওমর ফারুক। তিনি একের পর এক গুলি করে রাজু আহমেদকে হত্যা করেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ওমর ফারুক আর চাকরিতে যোগ দেননি।কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের খুরুশকুল এলাকা থেকে সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে কক্সবাজার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৪ জানুয়ারি ওই ভিডিও চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো
১৯ জুলাই নিহত রাজু আহমেদের বাড়ি মাগুরার সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামে। তাঁর বাবা কালাম মোল্লা পেশায় একজন দিনমজুর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রাজু এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় জননী কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন। মাত্র তিন মাস আগে চাকরিতে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায় ঘটনার সময় রাজুর হাতে একটি বস্তা ছিল। ওই সময় রাজুর সঙ্গে থাকা এক সহকর্মী জানান, ওইদিন দুপুরে আন্দোলন চলার সময় অফিসের নিচে মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করছিলেন রাজু। এসময় তাঁর কাছে এসে বন্ধুক দিয়ে গুলি চালায় এক আনসার ও এক পুলিশ সদস্য।
ওই সময় গুরুতর আহত অবস্থায় রাজু আহমেদকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে নিজ গ্রামে রাজু আহমেদকে দাফন করা হয়। রাজু জগদল ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন।