মাগুরায় ‘স্থানীয় প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র চর্চার সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে শহরের সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সভার আয়োজন করে প্রথম আলো বন্ধুসভা।
সভায় স্থানীয় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতি অনুরাগীরা অংশ নেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চলচ্চিত্র সংগঠক শিব্বির আহমেদ মান্না। সভায় বাংলা চলচ্চিত্রের পরিক্রমা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায় থেকে কিভাবে চলচ্চিত্র নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। শিব্বির আহমেদ মান্না বলেন, ‘চলচ্চিত্র শুধু বড় বাজেট বা রাজধানীভিত্তিক শিল্প নয়। কমিউনিটির সহযোগিতায় মফস্বল শহর থেকেও অর্থবহ চলচ্চিত্র তৈরি সম্ভব। স্থানীয় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কিংবা গ্রামীণ সংস্কৃতি আমাদের চলচ্চিত্রের সমৃদ্ধ উপাদান’। তিনি তরুণদেরকে দলবদ্ধভাবে চলচ্চিত্র চর্চায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় নিজেদের মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা। জেলা জাসাসের আহ্বায়ক কাজী মিহির বলেন, ‘মাগুরায় চলচ্চিত্র এমন আয়োজন আগে চোখে পড়েনি। আমরা ছোট বেলায় শহরের ছায়াবানি, পূর্বাশা ও মধুমতী হলে সিনেমা দেখতাম। এখন মানুষ হল বিমুখ। তবে চলচ্চিত্র শিক্ষা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। স্থানীয় পর্যায়ে এর চর্চা খুবই জরুরি’।
চলচ্চিত্র নির্মাতা শামিম শরীফ মনে করেন, ‘কমিউনিটির অংশগ্রহণ ছাড়া চলচ্চিত্র চর্চা টেকসই হবে না। অভিনয় থেকে লোকেশন—সব কিছুতে স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে পারলে চলচ্চিত্র তৈরি সহজ হয়ে যাবে’।
সাংস্কৃতিক কর্মী সুরভী খান মনে করেন, চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘এখন ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে স্থানীয় নির্মাতাদের কাজ ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে’।
সভায় কয়েকজন তরুণ কনটেন্ট নির্মাতা অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে মোঃ সাগর বলেন, ‘আমরা ফেসবুক, ইউটিউবের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করছি। সেগুলো দর্শক প্রিয়তা পাচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা পেলে ছোট পরিসরে শর্টফিল্ম ও ডকুমেন্টারি নির্মাণের মধ্য দিয়েই তরুণরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। অল্প খরচে কিন্তু বড় প্রভাব ফেলতে পারে এমন চলচ্চিত্র বানানো সম্ভব’।
স্থানীয় পর্যায়ে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের জন্য সময় উপযোগী চলচ্চিত্র প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এসময় সাংবাদিক এম ফেরদৌশ রেজাসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। প্রথম আলোর মাগুরা প্রতিনিধি কাজী আশিক রহমান বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদের গল্প নিজেরাই না বলি, তবে অন্যরা এসে সেটি লিখবে। তাই স্থানীয় শিল্প-সংস্কৃতি ধরে রাখতে তরুণদের চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত করা জরুরি’।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্ধুসভার সভাপতি শিহাব উদ্দিন। তিনি চলচ্চিত্র চর্চাকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে বন্ধুসভা সবসময় পাশে থাকবে।