মা ছেলে গেছে ডাক্তার দেখাতে। কিছুক্ষণ পর কাউন্টারে কি একটা খোঁজ নিতে অপেক্ষমান চেয়ার ছেড়ে সামনে গেলো দু’জনেই। ফিরে আসতেই দেখলো তাদের চেয়ারে অন্যরোগী আর তার স্বজন বসে আছে।
ছেলে চিৎকার করে উঠলো, ‘ওঠেন, এখান থেকে ওঠেন। আমি এখানে বসে ছিলাম।’
মাও তারস্বরে চিল্লাচ্ছে, ‘ওঠেন, আমার ছেলে এখানে বসা ছিলো আগে।’
বেচারা বয়স্ক মুরুব্বি তার স্ত্রীকে নিয়ে পেছনের সিটে চলে গেলো। পেছনে অনেক সিট ফাঁকা।
আমার মা হলে থাপ্পড় দিয়া বলতো, মুরুব্বিদের সাথে এইভাবে কেউ কথা বলে? তুই কিনে রাখছিস এই চেয়ার? এক্ষণ যাইয়া ক্ষমা চাইয়া আসবি। আর জীবনেও এমন যেনো না দেখি।
অবশ্য আমার মায়ের এই কথা বলারই দরকার হতো না। কারণ পরিবারের বেশিরভাগ এমনকি বাচ্চারাও ‘অন্যের তরে জীবন উৎসর্গ’ জাতীয় মানবতা ধারণ করে।
যতবার হসপিটালে কেউ ভর্তি হয়, আমার বড় ভাই দুই টিফিন ক্যারিয়ার ভাত-তরকারি নিয়া যায়। তার ধারণা, আশেপাশে নিশ্চয়ই প্রচুর অভুক্ত লোক থাকবে, তাদের ছাড়া আমরা খাবো কেমন করে..?
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আটতলায় বাতিঘর উদ্বোধন। আসাদুজ্জামান নূর আসছে। আমি অন্য এসাইনমেন্ট থিকা ঝাপায়ে আসছি। প্রোগ্রাম প্রায় শুরু। মানুষে গিজগিজ। এক কোনে খালি একটা টুলমতোন খালি আছে।
আমি দৌড়ায়ে আসছি বইল্লা কাউরে কিছু না জিগায়েই বসে পড়লাম।
মিনিট খানেক পর একাত্তর টেলিভিশনের বিনোদন সিনিয়র, চিৎকার করে উঠলো, এই তুমি/আপনি আমার জায়গায় বসছো/বসছেন কোনো? কে বসছে আগে দেখবেন তো?
এমন চিৎকার সবাই আমার দিকে তাকায়ে আছে। মনেহয় বাতিঘর আসাদুজ্জামান নূর না আমি উদ্বোধন করতে গেছি।
আমি কিছু বলার আগে এটিএন বাংলার মোটকা বড় ভাই, যাকে আমি খুবই পছন্দ করি, দূর থেকে ইশারায় কোন কথা না বলার নির্দেশ দিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে বললো। বুঝলাম কোকড়াচুলের মালে ঝামেলা আছে।
ওইখানেও আমি বলতে পারতাম, ‘জায়গা কি তুই কিন্না রাইখা গেছস..? সিনিয়র হইসস বইল্লা তো বেয়াদবী করার ক্ষমতা কিন্না নেস নাই।’
কিন্তু না, মানুষ চাইলেও সব কথা বলতে পারে না। অন্যের কথায় আমি কষ্ট পাওয়া আর আমার কথায় অন্যে কষ্ট পাওয়ার পার্থক্য তো আমাকেই শিখতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পড়াশুনা করা আমার এক বড় ভাই বলে, প্রতিটা মানুষ যা ভাবে, তার ২০ শতাংশ প্রকাশ করে। কারন প্রত্যেকটা কথা সে ফিল্টারিং করে ডেলিভারী দেয়। যার পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যত মজবুত, তার ফিল্টার করার ক্ষমতাও তত বেশি।