মাগুরায় বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাউকে যদি প্রশ্ন করা যায় লিন্ডসে লাইব্রেরি কোথায়, বেশিরভাগই হয়তো উত্তর দিতে পারবেন না। উত্তর না জানারই কথা। কারণ লিন্ডসে লাইব্রেরির ইতিহাস একশো বছরের পুরনো। বর্তমান আমরা যেটা ‘শহীদ সৈয়দ আতর আলী গণ গ্রন্থাগার’ হিসেবে জানি সেই প্রতিষ্ঠানের এক সময় নাম ছিল ‘মাগুরা লিন্ডসে লাইব্রেরি’।
গ্রন্থাগারের নথি ঘেঁটে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর বিশ দশকের শুরতে রায় বাহাদুর কিরন সিংহ ও সৈয়দ আব্দুর রউফসহ মাগুরার একদল সমাজ সচেতন ব্যাক্তি একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের গণ মানুষের মধ্যে জ্ঞান বিস্তার, বিকাশ ও একটি বিকাশমান সংস্কৃতির পরিমন্ডল গড়ে তোলা। এ উদ্যোগে সহযোগিতা করেন মাগুরার তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক কলিম উদ্দিন। বৃটিশ শাসিত বাংলায় প্রেসিডেন্সি বিভাগে তখন কমিশনার ছিলেন মিস্টার লিন্ডসে। তিনিও সহযোগিতা করেন। ১৯২৪ সালে সকলের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই গণগ্রন্থাগার। যার নাম করণ করা হয় ‘মাগুরা লিন্ডসে লাইব্রেরি’।
সাতচল্লিশে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ রাজের পতন হয়। স্বাধীন হয় ভারত ও পাকিস্তান। রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে লিন্ডসে লাইব্রেরির উপরেও। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান ভিত্তিক রাজনীতির প্রভাবে এই গ্রন্থাগারের নামকরণ করা হয় ‘মাগুরা কায়েদে আজম মেমোরিয়াল লাইব্রেরী’। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাগুরা মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সৈয়দ আতর আলীর নাম অনুসারে এর নাম করণ করা হয় ‘মাগুরা সৈয়দ আতর আলী গণ গ্রন্থাগার’। সবশেষ ২০১২ সালে এর নতুন নাম করণ করা হয়, ‘শহীদ সৈয়দ আতর আলী গণগ্রন্থাগার’।
মাগুরা শহরের জেলা পাড়ায় (কলেজ রোড) ৪০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই গ্রন্থাগার। যদিও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির দখলে আছে ২৬.১ শতাংশ জমি। এই গ্রন্থাগারের মূল ভবন দুই তলা বিশিষ্ট। সোমবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে অন্য দিনগুলোতে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংগ্রহ ১২ হাজারের বেশি। তবে এর একটি বড় অংশ পুরনো ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এখানে ১৭ সদস্যের একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ থাকার কথা। যেখানে পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য পদগুলো সাধারণ সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হওয়ার কথা। তবে সদস্যদের ভোটে সবশেষ কবে কমিটি গঠন হয়েছে সে তথ্য কেউ দিতে পারেন নি।
এ পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন যারা
একশো বছরের এই গ্রন্থাগারে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৭ জনের তথ্য জানা যায়। ব্রিটিশ আমলে সম্পাদকের দায়িত্বে কারা ছিলেন সে তথ্য জানা যায়নি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সম্পাদক ছিলেন আইনজীবী বাবু সুরেশ রায় চৌধুরী। ১৯৫৪ থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন আর আজাদ নামে এক ব্যাক্তি। এরপর মোঃ সাইদুল হক নামে এক সরকারি চাকরিজীবী ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রায় ৪৩ বছর গ্রন্থাগারের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন এব্দুল গনি একাডেমির প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক খান জিয়াউল হক। তিনি দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। ২০০৮ ও ০৯ সালে দায়িত্ব পালন করেন নাজির আহমেদ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ। এরপর তিন বছর সম্পাদকের দায়িত্বে কেউ ছিলেন না। ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গ্রন্থাগারে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুল হাসান। সবশেষ এই গ্রন্থাগারের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়রাম্যান আবু নাসির বাবলু। তিনি ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে কোন কমিটি নেই।