বিশেষ প্রতিবেদক/ দৈনিক মাগুরা
মাগুরা মোহাম্মদপুর উপজেলার আদর্শ টেকিনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আবু আব্দুল্লাহেল কাফি। তিনি সরকার পতনের পর থেকে বিনা ছুটিতে আত্বগোপনে রয়েছেন । কিন্তু প্রতি মাসের বেতন ঠিকই তুলে নিচ্ছেন। একই অভিযোগ ঐ উপজেলার যুবলীগ সভাপতি ও আমিনুর রহমান ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকোর বিরুদ্ধে। ঢাকায় বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ অভিযোগে পল্টন থানায় মামলার আসামী হবার পর থেকে তিনি ও আত্বগোপেন রয়েছেন । তবে বিতক উঠেছে আসামী হলেও তার সঙ্গে গোপনে সভা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা পলাশ মন্ডল। এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির নেতা কর্মীদের মাঝে চলছে ক্ষোভ। একই ভাবে বীরেন শিকদার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিলন ও পলাতক রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্প্রক্ত থেকে বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভুমিকার অভিযোগ রয়েছে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব প্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে তারা পলাতক থাকলেও বাড়ি বসেই হাজিরা খাতা কেউ স্বাক্ষর করছেন,তুলে নিচ্ছেন প্রতি মাসের নিয়মিত বেতন।
তবে এসবের অনেক কিছু সম্পর্কে জানেন না ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা পলাশ মন্ডল। এমনকি অনুপস্থিত থেকেও বেতন তুলে নিচ্ছে এমন অনিয়মরে বিষয়েও তিনি অবগত নন বলে জানা গেছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে তিনজন অধ্যক্ষ বাদেও কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা বিভিন্ন অভিযোগে মামলার আসামী হয়েছেন। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ও শিক্ষকদের মাঝে চলছে নানা বিশৃখলা। শিক্ষার্থীরা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
বিশেষ করে নিজ দলের ক্ষমতার দাপটে টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও নিয়মিত কলেজে না গিয়ে বেতন তুলতেন বলে অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগ নেতা আবু আব্দুল্লাহেল কাফির বিরুদ্ধে।
স্থাণীয়রা জানায়, ২০০২ সালে মহম্মদপুর উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত হয় মোহাম্মদপুর আদর্শ টেকিনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। প্রায় দুই যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানের ভবন নিয়ে সংকটসহ শিক্ষার্থীও সংকট রয়েছে। এমপিও ভুক্ত এই কলেজে রয়েছে ৯ জন শিক্ষক এবং দুই বর্ষের শিক্ষার্থী মিলে ৬০ জন। খুড়িয়ে চলা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এক মেয়াদে উপজেলার চেয়ারম্যান নিবার্চিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি দেখা যায় নি।
এ বিষয়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল হক আজকের পত্রিকাকে জানান,অধ্যক্ষ সাহেব কয়েকদিন অসুস্থ্য। তিনি কোন ছুটির দরখাস্ত নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জমা দেননি। গত তিনমাস তিনি কলেজে আসেন না। তবে ফোনে কথা হয়। সুস্থ্য হলে কলেজে আসবেন বলে জানান তিনি। তবে প্রতিষ্ঠানে না এসেও বেতন তুলেছেন বলে শিক্ষকরা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষকে বারবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেন নি।
অপরদিকে গত ৪ আগষ্ট মহম্মদপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা চলাকালীন আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এর নৈপথ্য ঐ কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকোর ভুমিকার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা জানায়,স্যার আমাদের উপরে হামলা করে ৪ ও ৫ আগষ্ট তার দলবল দিয়ে।
সরেজমিন আমিনুর রহমান ডিগ্রি কলেজে গিয়ে দেখা যায় কলেজের সামনে কিছু শিক্ষাথীরা দল বেধে আছে। তারা সবাই বলেন,অধ্যক্ষ পলাতক। কিন্তু তার হাজিরা খাতায় স্বাকক্ষর ঠিকই চলছে। এ বিষয়ে হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে কলেজের উপস্থিত শিক্ষকেরা কোন সহযোগিতা করতে রাজি হননি। এমনকি কমচারীরাও প্রতিবেদকের উপরে চড়াও হন।
মুঠোফোনে অধ্যক্ষকে ফোন দিলে তিনি কল ধরেন নি।
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে দেখা যায় যুবলিগ নেতা ও অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকো উপজেলা পরিষদ থেকে বের হয়ে এক মোটর সাইকেল যোগে স্থান ত্যাগ করেন। এসময় সেখানে স্থানয়ি বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে এর প্রতিবাদ করেন।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মৌমুর আলী মৃধা জানান,সে একজন মামলার আসামী হয়েও নিবাহী কমকতার সাথে অফিস সময়ের পরে (বুধবার) সন্ধ্যাবেলা সভা করেন শুনেছি। এটা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি।
সভা করা বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মন্ডল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নিয়মবর্হিভূত ভাবে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে বেতন তুলে নেয়ার কথা জানেন না তিনি। তিনি বলেন, কাফি সাহেব যে প্রতিষ্ঠানে যান না আমি জানি না। তবে।জেনেছি তিনি শারীরিক অসুস্থ্য। তবে কোন ছুটির দরখাস্ত দেননি এটা জানি না। এটা খতিয়ে দেখবো। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে এর সম্মানী তিনি তুলতেন বলে আমি জানি। অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকোর বিষয়ে তিনি জানান,তিনি একটি মামলার আসামী জেনেছি। তবে তিনি কলেজে যান না জানি না। খবর নিবো।