মাগুরা মাগুরার সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের বাসিন্দারা সরকারি খাতায় একটি হাসপাতালের বরাদ্দ পেয়েছেন দেড় যুগের বেশি সময় আগে। কিন্তু বাস্তবে সেই হাসপাতাল কোথায় তারা কেউ কেউ জানে না! বেরইল পলিতা ২০ শয্যা এই হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা অন্য জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন! সরকারি হাসপাতাল খাতাকলমে থাকায় প্রত্যান্ত এলাকার মানুষদের চিকিৎসার অভাবে বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কর্তপক্ষ বলছে জায়গা বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয়দের জটিলতায় এটা বাস্তবে দৃশ্যমান হয়নি। মাগুরা সদর উপজেলায় থাকা সরকারি ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল থেকে বেরইল পালিতার দুরত্ব প্রায় ২৯ কিলোমিটার।
যাতায়াতে বেশির ভাগ সড়ক ভাঙা ও গর্ত থাকায় স্থাণীয়রা জরুরী রোগীদের বেশির ভাগ সময় নিয়ে যান নিকটাবর্তী জেলা ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।যার দুরত্ব বেরইল পলিতা থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার। হাসপাতালের দুরত্ব বেশি হওয়ার কারনে পথিমধ্যে গর্ভবতী মা থেকে শুর করে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীদের প্রাণের ঝুকি নিয়ে চলতে হয়।
এভাবে জীবনের ঝুকি নিয়েই চলছে বেরইল পলিতার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। মাগুরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায় ,২০০৫ এর ২৭ এপ্রিল তারিখে মাগুরা বেরইল পলিতা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি সরকারি ভাবে অনুমোদন হয়। তবে কোন অবকাঠামো নির্মান করা হয়নি। উপরন্তু ২০১৩ সাল থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্তমান হাসপাতালটির অবকাঠামোগত কোন কিছু না থাকলেও চিকিৎসক রয়েছেন ২ জন ও নার্স নিয়োগ আছে ৩ জন। নিযোগকৃত দুই চিকিৎসক মাগুরার বাইরে কর্মরত আছেন,একজন নার্সও রয়েছেন যশোরে সংযুক্তিতে র্কমরত আছেন। বাকি দুইজন নার্স মাগুরাতেই কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন। তবে হাসপাতালটিতে অন্য কোন বরাদ্দ নেই বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। বেলইলপলিতার এক শিক্ষক অসিত বরণ বিশ্বাস জানান,হাসপাতালটি স্থাপনের কথা জেনে আসছি এক যুগের ও বেশি সময় ধরে।
কাগজ কলমে হাসাপাতাল থাকলেও আমরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে প্রতিনিয়িত বঞ্চিত হচ্ছি। প্রতান্ত অব্জল হওয়ায় আমাদের জরুরী চিকিৎসা নেয়াটা কঠিন হয়ে গেছে। ৩০ কিলোমিটারের ভেতরে কোন হাসপাতাল না থাকায় গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে জরুরী রোগীদের জীবনের ঝুকি রয়েছে। কেউ কেউ পথের মাঝেই মারা যাওয়ার ঘঁনাও কম নয়। আমরা আমাদের বরাদ্দকৃত হাসপাতালটি বাস্তবে সেজন্য দেখতে চাই। বেরইল পলিতা বাজারের ভ্যান চালক হাসাণ আলী বলেন, সরকারি হাসপাতাল আছে নাকি তাও তো জানি নে। গত দুই বছর আগে আমার শালী বাচ্চা হওয়ার সময় মারা গেল।
সেই বাচ্চাটিকে এখন আমারই দেখতে হয়। যদি সশয় মতো হাসপাতালে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো এমন র্দুদশা নাও ঘটতি পারতো। এসব ভূতুরে সেবা আমরা চাই না। আমরা আমাগের হাসপাতালটি দেখতি চাই। “সরকার বলতেছে আমাদের জন্য হাসপাতাল আছে, কিন্তু আমরা জানিই নে তা কনে! সরকারি ডাক্তার ও আছে শুনতেছি, অথচ এখানে কোনো হাসপাতালই নেই ।
তাহলে এই ডাক্তাররা কনে থায়ে ?” স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলামের ভাষ্য । স্থাণীয় কলেজছাত্র জিহাদ হোসেন জানায়, “যদি চিকিৎসক আর নার্সদের বেতন দেওয়া হয়, তাহলে তারা কাজ করছেন কোথায়? এই হাসপাতাল কি শুধু হিসেবের খাতা আর সরকারি বরাদ্দের মধ্যেই থাকবে?” কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়,হাসপাতাল নির্মানের জন্য জায়গা পছন্দ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক মতভেদ থাকার কারনে জমি দানকারী থাকলেও শেষে হাসপাতালটি নির্মান করা যায়নি। বিগত সরকারের প্রায় ১৬ বছর হাসপাতালের জায়গা নিয়ে টানাহেচড়া ও চিঠিচালাচালি থাকলেও বাস্তবে হাসপাতালটির অবকাঠামো গত কিছ্ ুআর দেখা যায়নি। ফলে পুরো হাসপাতালটি স্থাণীয় মানুষের কাছে একটি ভুতুরে হাসপাতাল নামে পরিচিত হয়ে আছে।
এ বিষয়ে মাগুরা সিভিল সার্জন শামীম কবীর জানান,হাসপাতালটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া প্রযোজন। আমরা স্থানীয়দের থেকে একটি আবেদন পেয়েছি যে তারা জমি দান করতে চান। প্রায় কয়েক একন জমি পওয়া যায়। কিন্তু জায়গা নিয়ে কিছু ব্যক্তির মধ্যে পাড়া ভিত্তিক জটিলতা রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবু আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর এসব ব্যক্তির স্বেচ্ছায় জমি দান বিষয়ে অবহিত করেছি। দীর্ঘদিন ধরে ওখানে হাসপাতাল অনুমোদন পেলেও না হওয়ায় স্থানীয়রা সেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
মাগুরা জেলা প্রশাসক মো: অহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের বিষয়ে কিছু অবহিত হয়েছি। সিভিল সাজর্ন আমাকে একটি চিঠি দিয়েছেন জায়গা বিষয়ে। আমি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছি। এতদিনে কেন হাসপাতালটি হলো না এটা অবাক করা বিষয়। অথচ হাসপাতালর জন্য চিকিৎসক ও র্নাস নিয়োগ দেয়া আছে। তারা আবার মাগুরাতেও অনেকে র্কমরত নেই বলে জেনেছি। এ বিষয়ে কি করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।