জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে এখন যার যা খুশি, তাই লিখছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ উঠে যাওয়ায় সামাজিক মাধ্যম একটা খেয়াল-খুশির বাহনে, পরিণত হয়েছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই পোস্ট, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করা এখন এক সাধারণ অভ্যাস। এর ফলে গুজব ও অপতথ্য বা মিসইনফরমেশন দ্রুত ছড়াচ্ছে সমাজে।
এই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের উদাহরণও কম নয়। যেমন, ২০২৩ সালে তোলা ছবিতে দেখা যায়, একজন লোক ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে খাবার খাচ্ছে। ২০২৫ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেকেই ছবিটি শেয়ার করতে থাকেন। কয়েকদিন আগে সিলেটের বাটা শো-রুমে লুটপাটের ঘটনায় দুটি এআই-জেনারেটেড ছবি ছড়ানো হয়। যেখানে দেখানো হয় দাড়ি ও টুপি পরে লোকজন লুটপাট করছে। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানা পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের ছবি দেখিয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীরা দাবি করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রতিপক্ষের হল সভাপতির কক্ষ থেকে ওইসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এমন বিভ্রান্তি শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় গণমাধ্যমে হিন্দু নির্য়াতন নিয়ে বাংলাদেশের ছবি বলে বহু ভুয়া ছবি ও পোস্ট ছড়ানো হয়েছে। যেমন ক্রিকেটার মাশরাফির বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ভিডিও বা ছবিকে আরেক ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি বলে প্রচার করা হয়। অনেক বাংলাদেশিও তা শেয়ার করেন। আবার আওয়ামী লীগের নতুন একটি প্রপাগান্ডা পেইজ দাবি করে, তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বাবা ১০ কোটি টাকা টাকায় বাড়ি কিনেছেন—যা নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-চেকাররা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন।
কারা গুজব ছড়ায়
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভাসিটি অব মায়ামির পলিটিক্যাল সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক শন লিটরেলের এর নেতৃত্বে একদল গবেষক দেখিয়েছেন—চার ধরনের মানুষ গুজব ছড়ায়। প্রথমত, যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গুজব তৈরি করে। রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক লাভের জন্য তারা মিথ্যা তথ্য বানায় এবং পুরোনো বা ভুল ছবি-ভিডিও দিয়ে মিথ্যা ন্যারেটিভ তৈরি করে। যেমন, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে এটিম নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে এমন বেশকিছু ডিসইনফরমেশন বা ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের পেইজ থেকে নানা বিকৃত ছবি ও ভিডিও বানিয়ে অপতথ্য কিংবা ভুয়া তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, মিডিয়া ব্যবহারকারী যারা ওই গুজব-চক্রকে সাপোর্ট করে তারাও গুজব ছড়ায়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত বা বামপন্থী, সেক্যুলারপন্থী বা ইসলামপন্থীরা তাদের ন্যারেটিভ প্রচার করতে কিংবা তার প্রতিপক্ষকে হেয় করতে একরম মিথ্যা তথ্য ছড়ান। কিছুদিন আগে দেখলাম ফেসবুকে বিএনপিপন্থী ও জামায়াতপন্থী দুটো গ্রুপ একে অপরকে গুজব ছড়ানোর জন্য দায়ী করছে।
তৃতীয়ত, যাদের চিন্তা ও চেতনা গুজবের ন্যারেটিভের সাথে মিলে যায়। যেমন, বিএনপির কোন নেতা চাঁদাবাজির দায়ে আটক হয়েছে—এই খবরটি আওয়ামী লীগ, জামায়াত, বামপন্থী বা এনসিপি সব গ্রুপের কাছেই লোভনীয় খবর। এরকম কিছু দেখলে তারা বাছ-বিচার ছাড়াই শেয়ার করেন।
চতুর্থত, যাদের মিডিয়া লিটারেসি কম, ভালো-মন্দ বিচার না করেই গুজবকে সত্য বলে মনে করে। সমাজে এই ধরনের লোকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গুজব ছড়াতে এরাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। কারণ সামাজিক মিড়িয়ার এলগরিদম তাদেরকে সহায়তা করে। আমি কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি উচ্চশিক্ষিত লোকজনও গুজব শেয়ার করছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন খুববেশি সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করেন না। অল্প সময়ের জন্য আসেন। অনেক সময় কিছু একটা শেয়ার করেন। আবার দ্রুত বের হয়ে যান। এরপর কি ঘটছে তা চিন্তা করেন না। কেউ কমেন্ট করলেও তা পড়েন না। মিথ্যা বা গুজব সরিয়ে দিতে অনুরোধ করলেও তারা আর দেখেন না। তারা মনে করেন—দিসি তো দিসিই।
যারা গুজব তৈরি করে এবং যারা গুজব থেকে ফায়দা নেয়—এই দুই গ্রুপকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত রাখা প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে যে রাষ্ট্রে নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা থাকে, কিন্তু অপতথ্য বা ভুয়াতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে শক্ত আইনি ও তার প্রয়োগ নেই, সেখানে এমন লোকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে যাদের চিন্তা ও চেতনা গুজবের সাথে মিলে যায় এবং যাদের মিডিয়া লিটারেসি কম—অর্থ্যাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রুপের মানুষকে গুজব থেকে নিবৃত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। রাষ্ট্র বা সমাজে মিডিয়া লিটারেসি বা গণমাধ্যম সাক্ষরতা বাড়ানোর মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।
২০১৯ সালে সিএনএন-এর রিপোর্টে উঠে আসে, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম মিথ্যা ছড়ায় ফিনল্যান্ডে। এরপর আছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, এস্তোনিয়া ও আয়ারল্যান্স। কারণ এই দেশগুলোর মিডিয়া সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি। এসব দেশের নাগরিকরা সামাজিক মাধ্যমে কোনকিছু শেয়ার করার আগে কয়েকবার চিন্তা করে। গুগল বা অন্য কোন উপায়ে সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এই দেশগুলো মিডিয়া লিটারেসি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
মিডিয়া লিটারেসি কী?
মিডিয়া লিটারেসি বা মিডিয়া সাক্ষরতা হলো গণমাধ্যমের সংবাদ, ছবি, বার্তা, চিহ্ন ও প্রতীকগুলিকে সমালোচনার চোখে বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং বুঝতে পারার দক্ষতা। এটি আমাদেরকে মিডিয়ার বিভিন্ন রূপ যেমন সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের বার্তাগুলোকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। মিডিয়া সাক্ষরতা শুধু তথ্য গ্রহণই নয়, বরং তা যাচাই-বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে। এটি আমাদেরকে মিডিয়ার অপ্রত্যাশিত প্রভাব থেকে সচেতন করে। একটি বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ সমাজসদস্য হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। লেখাপড়া করে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার মতই মিডিয়া সাক্ষর না হলে আপনি সমাজের জন্য ক্ষতিকর কাজ করে ফেলতে পারেন।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মিডিয়া লিটারেসির গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসারের সাথে সাথে তথ্যের প্রবাহ অসীম হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন আমরা হাজারো সংবাদ, বিজ্ঞাপন, ব্লগ পোস্ট এবং ভিডিওর মুখোমুখি হই, যার মধ্যে অনেকটাই ভুল তথ্য বা “ফেক নিউজ” হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব মিডিয়া লিটারেসি মোটাদাগে চারটি গুরুত্বের কথা বর্ণনা করেছে।
১. ভুল তথ্য চিহ্নিত করা: ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া অনেক তথ্য বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা হতে পারে। মিডিয়া লিটারেসি আমাদেরকে এই তথ্যগুলো যাচাই করতে শেখায়, গুগলে কী-ওয়ার্ড দিয়ে তথ্য চেক করা, উৎসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত সূত্রের সাথে ক্রস-চেক করা।
২. পক্ষপাত ও প্রোপাগান্ডা সনাক্ত করা: মিডিয়া বার্তাগুলো কখনও কখনও নির্দিষ্ট এজেন্ডা বা পক্ষপাত দ্বারা প্রভাবিত হয়। মিডিয়া সাক্ষরতা আমাদেরকে এই পক্ষপাত বুঝতে এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
৩. ব্যক্তিগত প্রভাব মোকাবেলা করা: গবেষণায় দেখা গেছে, মিডিয়া আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের চিত্র এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে। মিডিয়া লিটারেসি এই নেতিবাচক প্রভাবগুলো কমাতে সহায়তা করে।
৪. নাগরিক দায়িত্ব পালন: গণতান্ত্রিক সমাজে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য। মিডিয়া সাক্ষরতা ভোটারদেরকে রাজনৈতিক প্রচারণা এবং সংবাদের সত্যতা যাচাই করতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভাসির্টির গবেষক ড. মেলিসা নিউকম্ব মিডিয়া লিটারেসি অর্জনের বেশ কিছু পদ্ধতির কথা বলেছেন।
১. সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যা পড়ছেন (এবং পোস্ট করছেন) সে সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
খুব কম বা কোনও তথ্য যাচাই না করলে, ভুল তথ্য (ভুল তথ্য) এবং বিভ্রান্তি (ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৈরি মিথ্যা) সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যায়াম, ঘরের সাজসজ্জা এবং রেসিপি শেয়ার করার জন্য দুর্দান্ত হতে পারে – তবে তারা মানসম্পন্ন সংবাদের জন্য খুব অবিশ্বস্ত উৎস।
২. URL বা লিংকটি দুবার পরীক্ষা করুন
কিছু ওয়েবসাইট বিশেষভাবে গোপন উপায়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেয়: নিজেদেরকে নামী এবং পরিচিত সংবাদ উৎস হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে। যেমন বিবিসি বাংলা ডট কমের মতই দেখতে বিসিবি বাংলা ডট কম, যা একইরকম দেখতে কিন্তু বানানে ভিন্নতা আছে।
৩. অগোছালো লেখা থেকে সাবধান থাকুন
বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ উৎস থেকে সংবাদগুলো একটি কঠোর সম্পাদনা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। যদি লেখাটি বানান এবং ব্যাকরণগত ত্রুটিতে ভরা থাকে, তাহলে এটি একটি স্পষ্ট লক্ষণ যে উৎসটি সঠিক নাও হতে পারে। কে বলেছে, কোথায় বলেছে এই ধরণের তথ্য আছে কিনা সংবাদ শেয়ার করার আগে দেখে নিন।
৪. ‘ভুয়া খবর’ সম্পর্কে সন্দিহান হোন
সামাজিক মাধ্যমে কোন একটি খবর দেখলেই তা সত্য বলে মনে করা থেকে বিরত থাকুন। ধরা যাক একটি সংবাদ দেখলেন, জামায়াত নেতার প্রশংসা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা। এটা দেখেই লাফ দেবেন না। বরং সন্দেহ প্রকাশ করুন। কোন একটি ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হলে, মনে সন্দেহ হওয়াটাই মিডিয়া লিটারেসি বা সাক্ষরতা।
৫. শেয়ার করার আগে বিরতি দিন
কোনও লেখা ফরোয়ার্ড বা শেয়ার করার আগে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার আগে, বিশেষ করে যদি এটি আপনাকে উত্তেজিত করে, দুবার ভাবুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
৬. বিশ্বস্ত উৎসগুলিতে লেগে থাকুন
যতটা সম্ভব, সংবাদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করা এড়িয়ে চলুন—কারণ তাদের অ্যালগরিদমগুলি আপনার মতামতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, আপনাকে সঠিক বা বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি দেয়ার জন্য নয়। নিয়মিত গণমাধ্যম যেমন প্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদ ও ওয়েবসাইট অনুসরণ করুন। কোন তথ্য অবিশ্বাস্য মনে হলে সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করুন।
পরিশেষে বলবো, মহানবী মুহাম্মদ (সা)বলেছেন, কেউ যদি তোমাদের কাছে কোন নতুন তথ্য নিয়ে আসে, তা যাচাই করো। তথ্য যাচাই করার এই মানসিকতা হচ্ছে মিডিয়া সাক্ষরতা। বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্য ও সংবাদ এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করতে সক্ষম হওয়া, আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতিকারক, মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধ এবং ঘৃণা ও পক্ষপাত মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতা অপরিহার্য। এজন্য তথ্য বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাক্ষরতা কর্মসূচির মতো একটি ব্যাপক উদ্যোগ নিতে পারে।
২০১৪ সালে ফিনল্যান্ড সরকার স্কুল শিক্ষার্থীদের মিডিয়া সাক্ষরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। আমি এখানে যেসব বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছি, সেসব হাতে কলমে শেখানো হয় বিশেষ করে একাদশ- দ্বাদশ শ্রেনির শিক্ষার্থীদের। তাদের শেখানো হয়—মিডিয়ায় কোন তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, তার উৎস কী, এই গল্পটি কেন তৈরি করা হয়েছে, এতে কার বা কাদের দৃষ্টিভঙ্গী উপস্থাপন করা হচ্ছে, তথ্যটি কতটা নির্ভরযোগ্য এবং এর পেছনে মিডিয়ার কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এই বিশ্লেষণী দক্ষতাই শিক্ষার্থীদের তৈরি করে সচেতন ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যম ব্যবহারকারী হিসেবে।
এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের স্বার্থে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে গুজব বানায়। বেশিরভাগ লোক না বুঝে তা শেয়ার করে বসে। মিডিয়া লিটারেসির অভাবে তাদের মধ্যে কোন প্রশ্ন ওঠেনা, খটকা লাগে না। মিডিয়া লিটারেসি বাড়ানোর মাধ্যমে ফিনল্যান্ডে মিথ্যা ছড়ানোর হার এখন খুব কম। ফেসবুকে কিছু দেখলেই শেয়ার করা একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ সাক্ষরতার মতো মিডিয়া সাক্ষরতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই ব্যাধি দূর করতে হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে মিডিয়া লিটারেসিকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। যেন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা কোন কিছু শেয়ার করার আগে দু’বার ভাবে—আমি মিথ্যা বা ক্ষতিকর কিছু ছড়িয়ে দিচ্ছি না-তো। মানুষকে এভাবে ভাবানো গেলে মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধে বাংলাদেশও অনন্য হয়ে উঠবে।
কাজী মেহেদী হাসান
About the Author:
কাজী মেহেদী হাসান যুক্তরাষ্ট্রের সাদার্ন ইলিয়ন ইউনিভার্সিটির গণ যোগাযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ের পিএইচডি গবেষক। তিনি বাংলাদেশে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান ও এনটিভিতে সাংবাদিকতা করেছেন। লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইমেইল করুন এই ঠিকানায়:kazimehedi.hasan@siu.edu